মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ১০:২০ অপরাহ্ন

নকল প্রসাধনীতে সয়লাব যশোরের বাজার

ডি এইচ দিলসান॥ প্যাকেট, টিউব, রঙ সবই আসলের মতো। কিন্তু নকল। এমন সব প্রসাধনীতে সয়লাব যশোরের বাজার। ছোট্ট মুদি দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় সুপার সপ গুলোতেও দিদারসেই বিক্রী হচ্ছে নামি দামি ব্রান্ডের সব নকল পন্য। অতী মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা এসব পন্য বিক্রি করে যেমন রাতারাতি ধনী বনে যাচ্ছেন তেমনি নকল প্রসাধনী কিনে ধনী, মধ্যবিত্ত, গরিব সব শ্রেণীর ক্রেতাই ঠকছেন। এসব নকল পণ্য কিনে ক্রেতা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, চর্ম ও ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্তও হচ্ছেন।

যশোরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডের বিখ্যাত হেড অ্যান্ড শোল্ডার, আমেরিকার তৈরি প্যান্টিন প্রো-ভি শ্যাম্পু ও ডাভ ক্রিম বা ভারতের গার্নিয়ার শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের ক্রিম, লিপস্টিক, লোশন দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ছোট বড় সব ধরনের দোকানে। এছাড়া নিভিয়া, ডাভ, লাক্স, মাস্ক, অ্যাকুয়া মেরিল লোশন, ফেডআউট ক্রিম, ওলে ব্র্যান্ডের ক্রিম, গার্নিয়ার ও জার্জিনস লোশনের নামিদামী পণ্যগুলো নকল বিক্রি হচ্ছে। শ্যাম্পুর মধ্যে হেড অ্যান্ড শোলডার, ল’রিয়েল, রেভলন, পয়জন, প্যান্টিন ও বিদেশি সানসিল্ক নকল পাওয়া যাচ্ছে। আর এ সব পন্যের গায়ে আসল পন্যের মুল্য লেখা থাকলেও ব্লাকে আসা বলে ইচ্ছা মত এক এক জনের কাছে এক এক রকম দামে বিক্রী করছে। এক এক দোকানে এক এক রকম দাম, কিন্তু পন্যেও গায়ের লেভেল এক। পণ্যের প্যাকেট বা বোতল ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করেও আসল-নকল বোঝারও উপায় থাকে না।

এ ব্যাপারে ইউনিলিভার এর সিনিয়র সেলস অফিসার মাহামুদুর রহমান বলেন, আমরা এই কিছু দিন আগেও অয়ন স্টোর এবং দিদার স্টোরে নকল ইউনিভারের ডাভ সাবান, ডাভ কিম, সানসিল্ক স্যাম্পু, ও বডি লোশন ধরেছে। তিনি বলেন, যশোরের প্রায় সব দোকানেই এমন নকল পন্য পাওয়া যায়, যে গুলো সাধারণ ক্রেতারা কোনভাবেই ধরতে পারে না। তিনি আরো বলেন শুধু ইউনিলিভার নয় নামি দামি সব ব্যান্ডের পন্যগুলো এভাবেই মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে অতী মুনাফার আশায় বিক্রী করছে তারা। তার কারন হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের একটি পন্য বিক্রী করে দোকানদারের লাভ হবে সর্বচ্চ ২-৩ টাকা আর একটি নকল পন্য বিক্রী করলে তাদের লাভ হয় ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোরের চুরি পট্টির কয়েকটি দোকানের কর্মচারীরা জানান, দোকান মালিকরা ঢাকার চক বাজার থেকে গিয়ে সরাসরি নকল পন্য নিয়ে এসে সেগুলো দোকানে বসে প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন পাইকারি বিক্রি করা হয়। শুধু তাই না খুচরা বিক্রিও করা হয়ে থাকে। আর এখান থেকে সে সব প্রসাধন ছড়িয়ে পড়ছে পাড়া-মহল্লার দোকান এবং গ্রাম ও মফস্বলের বাজারে।

এ ব্যাপারে ল্যকমির ডিলার মো: হুসাইন বলেন, শহরের নামি দামি সব দোকানেই ল্যাকমির নকল পন্যে সয়লাব হয়ে গেছে। তিনি বলেন আমরা যে দামে পন্য বাজারে ছাড়ি তার থেকে অনেক কম দামে ল্যকমির প্রোডাক্ট বলে চালাচ্ছে, তিনি বলেন প্যাকেট হুবাহু এক হলেও ভেতরে তা পুরোটাই নকল। তিনি বলেন, ল্যাকমি ফেসওয়াস আমরা ছাড়ি ২২২ টাকাই আর সাধারন দোকানদাররা সে গুলো বাইরের বলে করো কাছে ৩০০ থেকে ৫০০ আবার কারো ছাছে ১৫০ টাকা ও বিক্রী করছে বলে আমাদেও কাছে খবর আছে। তিনি বলেন এ সব পন্য ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকার।

যশোর মেডিকেল কলেজের স্কিন বিশেষজ্ঞ ডা: তেীহিদুর রহমান বলেন নকল প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারে ত্বকের সমস্যা জটিল হয়, দেহে ছড়িয়ে পড়ে নানা ধরণের রোগ। এসব তৈরিতে এসিড, পানি, মোম, সুগন্ধি ও পারফিউমের অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়। মোমের পরিমাণ বেশি হলে তা ত্বকে ঢুকে লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। ফলে মেছতা, ব্রন, ফাঙ্গাস জাতীয় রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। মার্কারিযুক্ত প্রসাধণী ব্যবহারে সরাসরি স্কিন ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে। নকল প্রসাধণী তৈরিতে নিম্নমানের ভেজাল সামগ্রী ব্যবহার করায় চুলকানি, ফোস্কা পড়া, ত্বকের প্রদাহ, সংক্রমণ এসব নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তিনি আরো বলেন ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের সাধারণ লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ব্যবহারে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারকারীর কন্টাক্ট ডারমাটাইসিস হয়। এতে চামড়া লাল হয়ে যায়, যা পরবর্তী হসপড অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন তৈরি করে। ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারে স্কিন ক্যান্সার হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এর পাশাপাশি ত্বকে দানা, হাঁপানি, মাথাব্যথা ও চোখ জ্বালাপোড়াসহ অন্যান্য রোগের উপদ্রব হতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com